মৃত্যুর আগের মরণ

0

 


রাত্রি বেশ গভীর। চারপাশের আর্টিফিশিয়াল আলোগুলো সব নিভে গেছে। কেউ নিভিয়ে দিয়েছে। নিভু নিভু করে মেঘের আড়ালে চাদের ধার করা এক চিলতে আলো আপনার ঘরের জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে এসে পড়েছে। আপনার চোখদুটো বদ্ধ। চিরতরে। এ চোখজোড়া আর কোনোদিন খুলবে না। কী? ভাবতে পারেন এমনটা? একটু ভাবুন। 


গভীর রাত। এ চারপাশের শব্দ-কোলাহলহীন রাত্রে আপনাকে ঘিরে রয়েছে শুধুই কিছু সমাপ্তি। চাদের আলো আপনার দেহ স্পর্শ করছে তবু আপনার একটি পশমও তা অনুভব করছে না। একটু গভীরভাবে ভাবুন।


রাতের আধার কেটে গেলো। সকালের আলো ফোঁটার আগে মসজিদে আজানের ধ্বনি। যদিও বা এ ধ্বনি আপনার অপরিচিত। প্রতিদিন আপনি এসময় ঘুমিয়ে থাকেন। ফজরের নামাজও পড়েন না। আপনার কোনো সমস্যাও হয় না। আপনি ঘুম থেকে উঠতেন বেলা ৮ টায়। আজ ৮ টা পেরিয়ে ৯টা বাজতে চললো কিন্তু আপনি উঠলেন না। কেউ আপনার খোজও নিচ্ছে না। হঠাৎ আপনার মা’য়ের খেয়াল হলো তার ছেলে/মেয়ে টা আজ এত বেলা করেও ঘুম থেকে উঠছে না কেন? মা ছুটে এলেন।একটু নাম ধরে ডাকাডাকি করলেন। নাহ! কোনো সাড়াশব্দ নেই! নিশ্বাসের শব্দও না!


মা একটু চিন্তিত। কিছুক্ষন পর পর এসে ডাকছেন। কোনো ফলাফল পান না। এরপর বাড়ির আরোও কয়েকজন এলো। তারাও কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। শেষে বিচলিত কেউ কেউ দরজায় ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজা ভেঙে ফেললো। আপনি বিছানায় নিষ্পাপ এক শিশুর ন্যায় শুয়ে আছেন। সবার চোখে আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তবে এ দুনিয়া, এ প্রহর গোনার সময়, কিছু নিশ্বাসের শব্দ আপনাকে বিদায় দিয়েছে।


আপনাকে আপনার বাবা একটু ধাক্কা দিলেন।  আপনি উঠলেন না। সবাই নিশ্চুপ। এক ফালি কান্নার আওয়াজ ঘরের কোণা থেকে ভেসে আসছে। আপনার মা কাঁদছে। আপনার মা কাঁদছে অথচ আপনি শুনছেন না। কেন তিনি কাঁদছেন আপনি হয়তো বা আন্দাজ করেছেন।

আপনি গতকাল রাতের গভীর রাতে মারা গেছেন। আপনি সারা জীবন রবের কথা অমান্য করে শেষ মুহূর্তেও তাওবা করার সুজোগ পাননি। পাননি পরকালকে নিশ্চিন্তে কাটানোর জন্য কিছিু ফলাফল জোগাড় করতে।


.............................................................................................................................................



আপনাকে গোসল করিয়ে সাদা কাফন পড়িয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে মাটির ভিতরে রেখে দেওয়ার জন্য।


কুরআনের একটা আয়াত মনে পড়ে গেলো।


“মাটি থেকে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তাতেই আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব, আর তাত্থেকে তোমাদেরকে আবার বের করব।” (সুরা ত্বহা, আয়াত ৫৫। ২০ঃ৫৫)



আপনাকে সবাই রেখে গেলো এক স্তুপের নিচে। এখানে নিকষ কালো অন্ধকার। আশেপাশে কেউ নেই। আপনি একা, শুধু আপনি আর কেউ না। এমনকি আপনার দেহটাও আর আপনার নেই। আপনার কোনো ইচ্ছারই আর কোনো মূল্য নেই। আপনার মেয়াদ শেষ। আপনি অকেজো।


এখানেই শুরু হলো আপনার এক অন্তহীন জীবনের। আপনি আপনার ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য কতকিছু করলেন কিন্তু দূর্ভগ্য এই অন্তহীন জীবনের জন্য তেমন কিছুই আপনার কাছে নেই।


এ আধারের মাঝে দুজন অচেনা কেউ আপনার পাশে এসে বসে আছেন। আপনাকেও বসিয়ে দিয়েছে। হয়তো আপনার দেহকে নয়, আপনাকে-শুধু আপনাকে। আপনার দেহকে নয়। আপনার কানে কিছু প্রশ্নের আওয়াজ ভেসে আসছে। প্রশ্নগুলো আপনার কাছে অদ্ভুত ঠেকলো, কেন জানিনা!

     

     তোমার রব কে?

     তোমার দ্বীন কী?

     তোমার নবি কে?


আপনি হয়তো বলে উঠলেন হায়! আমি তো এ সবের কিছুই জানি না।  

এই পর্যায়ে যা ঘটবে আপনি হয়তো ভাবতে পারবেন না। আপনি আপনার ভাবনাকে বন্ধ করবেন না। আপনি ভাবুন। যদি আপনি এরুপ উত্তর দেন এর পরের মুহূর্ত কেমন হবে আপনার ? কেমন? একটু অচেনা? একটু নয় পুরোটাই অচেনা। 


কবরের আযাব। অবর্ণনীয়!


আপনি একা। আপনার দেহ লুটিয়ে পড়ে আছে মাটিতে। যে দেহকে সুন্দর করার জন্য কত ক্রিম ব্যবহার করেছেন কিন্তু আপনাকে, শুধু আপনাকে আপনার দেহ নয়! আপনাকে সুন্দর করার জন্য রবের নিকট হয়তো একবেলা সেজদাহ’ও করেননি।


এবার প্রস্তুত হোন। আপনার দেহ মাটির সাথে মিশে যাবে। আপনি নন। আপনি তো আবার জীবিত হবেন। এতক্ষণে আপনার দেহের পচন শুরু হয়ে গেছে। আপনার দেহের ভেতরে থাকা ব্যাক্টেরিয়াগুলো আপনার দেহে পোকা জন্ম দিতে সাহায্য করছে। সেই পোকাগুলো যেগুলো আপনি দুনিয়ায় অনেক ভয় পেতেন। কাছেও যেতেন না। আপনার চোখ, মুখ, নাক, হাত-পা সব তারা আস্তে আস্তে খেয়ে ফেলবে। নিশ্বেষ হয়ে যাবে আপনার দেহ, আপনি নন। আপনি তো আবার উঠবেন। হাশরের ময়দানে। বাকিটা নাহয় সেখানের জন্যই থাক।



“এবারে কল্পনা হতে বেরিয়ে আসুন। কোনো নামাজের ওয়াক্ত হয়ে থাকলে এক্ষুণি ওযু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ুন। জান্নাতের উদ্দেশ্যে। আর ফিরিয়েন না সেই পাপময় দিনগুলোতে। আসুন আপনার রবের পথে। নিজেকে ভালোবাসুন। আপনার রবের নিয়মগুলোকে অনুসরণ করুন।”



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)