পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল ধারণা

0





শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা কথা প্রচলিত আছে সেটা হলো পরীক্ষাকেন্দ্রে বোঝা যায় আসল বন্ধু কে। মানে তারা মনে করে পরীক্ষায় যে দেখাবে সেই আসল বন্ধু। যা কার্যত একটা মিথ্যা কথা। আসুন একটু যুক্তি দিয়ে কথা বলা যাক।
মনে করুন আপনি একজন ভালো শিক্ষার্থী। আপনি সারাবছর ভালোভাবে পড়াশুনো করেছেন, এখন পরিক্ষা দিতে যাবেন। আপনার মাথায় একটাই চিন্তা- ভালো ফলাফল অর্জন করতে হবে। কিন্তু পরীক্ষায় অন্যকে দেখাতে গিয়ে আপনার ফলাফল খারাপ হলো। এখন কথা হলো এর দায়ভার কার? এটা অবশ্যই আপনাকেই বহন করতে হবে। আপনার পরিবার, বাবা-মা, আত্মীয়, সমাজকে আপনাকেই সামলাতে হবে। তবে এত অসুবিধা সত্তেও আপনি কেন দেখাতে যাবেন?
            আচ্ছা এবার ধরেই নিলাম অন্যকে দেখাতে আপনার কোনো ক্ষতিই হলো না। ফলাফল যতেষ্ঠ ভালো হলো, তবুও একটা প্রশ্ন- আপনি যেভাবে পড়লেন যাকে দেখালেন সে কেন পড়লো না? তার পড়াশুনার দায়িত্ব কী আপনার যে আপনাকে দেখাতে হবে। আপনি যেমন সারাবছর কষ্ট করে পড়ে ভালো ফলাফল অর্জন করলেন এই কষ্টটা সে কেন করলো না? সে কী কষ্ট করতে পারে না? কেন পারবে না? না পারলেও তার দায়ভার অন্যকে কেন নিতে হবে?
এখন একটু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলা যাক,
            ধর্ম আর জীবন আলাদা নয়, ধর্মই হচ্ছে জীবন ব্যবস্থা। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য পরিক্ষা দেখে লেখা এবং দেখানো দুটোই অন্যায় কাজ। ভাববেন না যে শুধু দেখে লিখলেই কেউ অন্যায় করলো, বরং আপনি যদি অন্যকে দেখানও তবে আপনিও অন্যায় করলেন। কীভাবে? চলুন খোলাসা করা যাক--
            প্রথমে পরিক্ষার অর্থটা বুঝুন, আপনি সারাবছর কী পড়লেন, কতটুকু পড়লেন, কতটুকু মনে রাখতে পারলেন এর যাচাই করার মাধ্যম হলো পরিক্ষা। অর্থাৎ আপনি নিজে কতটা অর্জন করলেন তার জন্যই পরিক্ষা। আর আপনি যদি দেখে দেখে খাতায় লিখেন তাহলে যে ব্যক্তি খাতা কাটবে সে বুঝবে আপনি সেটা পরেন, কিন্তু আপনি তো বস্তুত তা পারেন না, দেখে দেখে লিখেছেন-এটা কী মিথ্যা হলো না। আর নিশ্চই মিথ্যা একটি হারাম কাজ। যদি আপনি দেখান তবে মিথ্যা বলতে সাহায্য করলেন, এটাও অন্যায়। আর পরিক্ষায় যদি দেখে দেখেই লেখা যেত তবে কর্তৃপক্ষ এত কঠর নিয়ম কেন করেছে। আপনি নিয়ম ভঙ্গ করে প্রতারনা করছেন। এটাও অন্যায়, এগুলো করে হয়তো ভালো ফলাফল পাবেন, জান্নাতের আশা করবেন না।
সহপাঠিকে পড়াশুনায় সাহায্য করা আপনার কর্তব্য, পরিক্ষায় দেখানো নয়। 
            এবার আমার ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করি, আপনার পাশে একটা ভালো ছাত্র আছে সে হঠাৎ একটা কিছু ভুলে গেছে আর আপনার সেটা মনে আছে, সে জনতে চাইলে জানিয়ে দিন। তবে শুধু জানানোতেই থামানো উচিৎ। খাতা খুলে পুরোটা দেখাবেন এমনটা নয়। এখন প্রশ্ন হলো ভালো ছাত্রকে কেন দেখাবো? পরে সে আমাকে সাহায্য করবে সেই জন্য? আসলে ব্যাপারটা সেরকম না। তাহলে কিরকম ?
            ধরুন আপনি একটা ভালো ছাত্রকে দেখালেন। সে কিন্তু পরবর্তিতে ভাববে যে এবার সে দেখালো পরেরবার নাও দেখাতে পারে। এই চিন্তা থেকে সে পড়া আরো বাড়িয়ে দিবে যেন পরে কারোর দেখে লিখতে না হয়। এতে তার উপকারই হলো।

অপরদিকে যদি একজন খারাপ ছাত্রকে দেখান তবে সে উল্টোটা ভাববে। সে ভাববে যে দেখেই তো লেখা যায় পড়ার আর দরকার কী? তখন সে যেটুকু পড়তো সেটুকুও পড়া বাদ দিবে। এতে আপনি তার ক্ষতি করলেন।
আশা করি সকলেই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। দেখাদেখি করাটা খারাপ কাজ কিন্তু আমাদের সমাজে এটা স্বভাবিক বিষয়। এখন পিতা-মাতারাও ছুটে আসেন তার সন্তানকে যেন ভালো ছাত্রের সাথে বসানো হয়। এটা আসলেই অবাক করে আমায়। 

“আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।” (আমিন)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)