ইসলাম ও সাহিত্যের সম্পর্ক

1


কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য, ইসলাম ও সাহিত্য, সাহিত্য, নজরুল ইসলাম ,ইসলামি সাহিত্য,কাব্য সাহিত্যে নজরুল ইসলাম,বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলাম এর অবদান, জীবন ও সাহিত্য, ,কাব্য সাহিত্যিক কাজী নজরুল ইসলাম,সপুঁথি সাহিত্য ও ইসলামী উপন্যাস নাটক থেকে ইসলামের ইতিহাস জানা , ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য



মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদেয় একমাত্র জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম। এমন কোনো বিষয় নেই যা সম্পর্কে ইসলামে বলা হয় নাই। প্রশ্ন হলো ইসলাম কী সাহিত্য তথা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান  ইত্যাদি সমর্থন করে? এ প্রশ্নে সরাসরি হ্যা কিংবা না কিছুই বলা ঠিক নয়। চলুন একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।


কবিতা: কবিতা বলতে মূলত ছন্দের মিশেলকে বুঝায়। কোনো বিষয়কে আপনি যদি ছন্দের মাধ্যমে তুলে ধরেন তবে সাধারণভাবে তাকে কবিতা বলা যাবে। কবিতা বা কাব্য রচনা, আবৃতি ইত্যাদি ইসলামে জায়েজ। অর্থাৎ আপনি কবিতা লিখতে বা পড়তে পারেন এতে ইসলাম কোনো বাঁধা দেয় না তবে আপনি যে কবিতা লিখছেন সে কবিতা কেমন হবে এ ব্যাপারে ইসলাম বিধি আরোপ করেছে।

আপনি যে কোনো বিষয়ে লিখতে পারেন যেমন মানবতাবাদী, চেতনাবাদী, আল্লাহ প্রশংশা, নবি-রাসুলের প্রশংশা ইত্যাদি। তবে আাপনি যদি হারামকে সমর্থন করে কবিতা লিখেন তবে তা জায়েজ হবে না বরং পরকালে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া কবিতায় যদি ভালো কিছু থাকে তবে তা শতভাগ জায়েজ।


এক হাদিসে কবিতা আবৃতি জায়েজ হওয়ার প্রমান পাওয়া যায়,


আমর আন–নাকিদ ও ইবনে আবু উমর (রাহঃ) ......... আমর ইবনে শারীদ (রাহঃ) সূত্রে তার পিতা [শারীদ (রাযিঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন (একদিন) আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর (বাহনে) আরোহী হলাম। তিনি বললেন, তোমার স্মৃতিতে (কবি) উমাইয়া ইবনে আবুস–সালত–এর কবিতার কোন কিছু আছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, চালাও (শুনাও)। আমি তখন তাঁকে একটি পংক্তি আবৃত্তি করে শোনালাম। তিনি বললেন, চালাও। তখন আমি তাঁকে আর একটি শ্লোক আবৃতি করে শোনালাম। তিনি বললেন, চালাও। শেষ পর্যন্ত আমি তাঁকে একশটি পংক্তি আবৃত্তি করে শোনালাম।  (সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নং ৫৬৮৯)


গল্প ও উপন্যাস: গল্প বলতে বুঝায় কোনো কল্পিত কাহিনী। অর্থাৎ এ কল্পিত কাহিনী মিথ্যা ( কিছু ক্ষেত্রে আলাদা)। আর ইসলামে মিথ্যা বলা জঘন্য অপরাধ, এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু গল্প বা উপন্যাসের বেলায় সেটি মিথ্যা হলেও তার ধরণ একদম ভিন্ন। এখানে যে কাহিনী তুলে ধরা হয় পাঠকরা সকলেই জানে যে সে কাহিনী কল্পিত। তাই এতে কেউ প্রতারিত হয় না বা ভুল বুঝে বসে না। এটা নিছক একটা কাহিনী। অর্থাৎ গল্প বা উপন্যাস লিখতে বা পড়তে কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি কোনো গল্প বা উপন্যাস আল্লাহর নিয়য়ের বিরোধ করে, চেতনার বিরোধি হয়,মানবতার বিরোধি হয়, সমাজে বিশৃঙ্খলা করে তবে তা হারাম। গল্প বা উপন্যাসে এমন কিছু তুলে ধরা যাবে না যা মানুষের মনকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়। গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সুপ্তভাবে থাকতে পারে কিছু নৈতিক শিক্ষা। 

বর্তমানে অধিকাংশ গল্পে ও উপন্যাসে দেখা যায় ছেলে-মেয়ে হারাম সম্পর্ককে স্বাভাবিক এবং প্রশংশনীয় চিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয় যা বস্তুত হারাম। মোটকথা গল্প বা উপন্যাসে যদি খারাপ কিছু না থাকে তবে সেটা যেই লিখুক ( যে ধর্মের-বর্ণের মানুষই হোক) তা পড়তে সমস্যা নেই বা লিখতেও কোনো সমস্যা নেই। 


গান: যখন কোনো কবিতা বা ছন্দকে সুর দিয়ে উপস্থাপন করা হয় তখনই তাকে গান বলে। কবিতা যেহেতু জায়েজ (হারাম কথামুক্ত কবিতা) তাই তা সুর দিয়ে বলাও অবশ্যই জায়েজ। তবে গানের কথামালার মধ্যে খারাপ কিছু থাকতে পারবে না। গানের কথায় আল্লাহ-নবি-রাসুলের প্রশংশা, দেশের প্রতি ভালোবাসা, বাবা-মা এর প্রতি ভালোবাসা এবং যেকোনো বিষয়ে ভালো কথা বা শিরকমুক্ত কথা থাকলে তা অবশ্যই জায়েজ। তবে যদি গানে খারাপ কথা থাকে বা সে গানে এমন কোনো কথা থাকে যাতে আল্লাহর নিয়ম ভঙা হয় তবে তা হারাম। যেমন; তথাকথিত প্রেমের গানের ভাষাগুলো ( তুমি আমার জিবন-মরন, তোমার জন্য সব করতে পারি, শুধু তোমাকেই চাই আর কিছু না ইত্যাদি ইত্যাদি)।

এর সাথে আরও একটি বিষয় জড়িয়ে আসে তা হলো মিউজিক বা বাজনা। গানের কথা যত ভালোই হোক না কেন (কুরআনের আয়াত হলেও) তাতে যদি বাজনা যুক্ত থাকে তবে তা শতভাগ হারাম। এ কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।


রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে  (সহিহ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫১৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫৯০)


সারকথা: বুঝলাম, না হয় এসকল কিছু জায়েজ ( উল্লিখিত শর্তসাপেক্ষে) । তবে যদি সাহিত্য পড়তে বা লিখতে আল্লাহর ইবাদতে কোনো ঘাটতি হয় বা নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য ইত্যাদির ব্যাঘাত ঘটে তবে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন